কুষ্টিয়াঃ

নতুন সড়ক আইন সংশোধনের প্রতিবাদে কুষ্টিয়ায় তৃতীয় দিনের মতো বাসচালকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাসহ আভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজ বুধবার সকালেও যাত্রীরা শহরের মজমপুর ও চৌড়হাস এলাকায় বাস টার্মিনালে গিয়ে বাস না পেয়ে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকেই বাস না পেয়ে ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ তিন চাকার বিভিন্ন যানবাহনে গন্তব্যে রওনা দিচ্ছেন।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় দীর্ঘ আলোচনায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইনে কিছুটা শিথিলতার দাবি জানানো হয়। এসময় তাদের মুঠোই ফোনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আশ^াস দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট আপাতত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এসময় কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পুলিশের প্রতিনিধি ও পরিবহন শ্রমিক এবং মালিকদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা সামগ্রিক স্বার্থ বিবেচনায় আজ বুধবার সকাল থেকে পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই নিয়ে রাতে আলোচনায় বসে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ চালকদের সাথে। চালকরা পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের কথা মানতে রাজি হয়নি সেখান থেকেই চালকদের সিদ্ধান্ত হয় গাড়ি না চলানোর জন্য। রাতে আবারও সিদ্ধান্ত হয় কর্মবিরতি পালনে।

এদিকে কুষ্টিয়া থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় জেলার কয়েকটি রেল স্টেশনে যাত্রীদের তীব্র চাপ বেড়ে গেছে। যাত্রীরা টিকিট না পেয়েও জোর করে ট্রেনে উঠছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,আজ সকালে কুষ্টিয়া বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মিনি পিকআপ, মাইক্রোবাসসহ ছোট গাড়িগুলোতে কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে হচ্ছে।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চালকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, সড়ক থেকে দরকার হয় মাঠে গিয়ে ধান কেঁটে খাবো। তারপরও নতুন আইনে দুর্ঘটনার জন্য চালকদেরই দায় নিতে হচ্ছে। পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে। চালকরা ইচ্ছা করে দুর্ঘটনা ঘটায় না। তারপরও তাদের শাস্তি হবে। এ আইন মেনে নেয়া যায় না। এরই প্রতিবাদে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি।

আলেক চাঁদ নামে এক যাত্রী বলেন, কুষ্টিয়া বাস টার্মিনালে ও শহরের মজমপুর মোড়ে বাসগুলো সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। আমরা এসে বাস চলাচল সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছি। কিন্তু বাস চলাচল কখন শুরু হবে, কেউ তা বলতে পারছেন না। এখন কিভাবে গন্তবে যাবেন তাই নিয়ে চিন্তায় পড়ে আছি।

কুষ্টিয়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক আবজাল হোসেন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেনের সাথে আলোচনায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইনে কিছুটা শিথিলতার দাবি জানানো হয়। এসময় মুঠোই ফোনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ এমপির আশ^াসে শ্রমিকদের ধর্মঘট আপাতত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। রাতে আমরা এসে চালকদের অনেক বুঝিয়েছি তারা এমন আইনে গাড়ি চালাবেন না বলে ছাপ জানিয়ে দিয়েছে। তাই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ‘নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের প্রতিবাদে চালক ও শ্রমিকরা তৃতীয় দিনের মতো বাস চালাচ্ছে না। তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছে।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন,পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করা হয়েছিল। এ সময় মালিক ও শ্রমিকদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। চালক ও শ্রমিকরা বিষয়টি নিয়ে পূর্ণ বিবেচনা করবে বলে আমরা আশা করছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here