রাজবাড়ীঃ
খদ্দেরের অভাবে বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎবিল, সন্তানদের খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার যৌনপল্লির কর্মীরা।
চাহনি আর চলন বলনই বলে দিচ্ছে এখন দিন চলে না ওদের। সারা দিন খদ্দেরের আশায় থেকে, তাদের দেখা না পেয়ে, না খেয়েও দিন কাটাচ্ছেন কেউ কেউ।
জানা যায়, যৌনপল্লিতে কয়েকটি মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু, মাদক সেবীদেবীদের আনাগোনা কমাতে ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে যৌনপল্লিতে দফায় দফায় অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন। সেই সঙ্গে পল্লির প্রধান প্রবেশ পথ খোলা রেখে অপর ছয়টি প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়া হয়।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লীর প্রায় পাঁচ হাজার বাসিন্দা গত আড়াই মাস ধরে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন।
পল্লির বাসিন্দারা জানান, এখানে যৌনকর্মী, তাদের সন্তানরা, স্বামী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কাজের মাসীসহ অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। পল্লির শুধুমাত্র প্রধান প্রবেশ পথটি খোলা রেখে বাকি সবগুলো গেট বন্ধ করে দেয়ায় বিশাল এই পল্লির বাসিন্দাদের স্বাভাবিক চলাফেরায় খুব সমস্যা হচ্ছে। পল্লিতে খদ্দেরসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আসা লোকজনের আসা-যাওয়া অনেকাংশে কমে গেছে। এতে আয় রোজগার বন্ধ হয়ে তারা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
যৌনকর্মীদের দাবি নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে পল্লির অন্তত আরো দুটি গেট খুলে দেয়া হোক।
আলাপে পল্লির মনেকা বাড়িওয়ালা জানান, তার বাড়িটি মেইন গেট থেকে অনেক দূরে। পার্শ্ববর্তী গেটটি বন্ধ থাকায় এ এলাকায় লোকজনের আনাগোনা একেবারেই নেই। এ অবস্থায় আয় রোজগার না থাকায় মেয়েরা না খেতে পেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। যার কাছে যা সঞ্চয় বা মূল্যবান জিনিস ছিল সব বিক্রি করা হয়ে গেছে। একটু বয়স্করা উপায় না পেয়ে এখন ভিক্ষুকের মতো বিভিন্ন জনের কাছে হাত পাতছে।
যৌনকর্মী শাহনাজ আক্তার, রুমা আক্তার, সালেহা আক্তার, সুমি, নিপা, পুস্পসহ অনেকেই জানান, তারা গত আড়াই মাস খুব কষ্টে আছেন। দয়া করে যেন তাদের বাঁচানোর ব্যবস্থা করা হয়।
যৌনপল্লির নেত্রী পারভীন আক্তার বলেন,পল্লির মেয়েদের নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে তাদের আয় রোজগার সচল রেখে বেঁচে থাকার সুযোগ দেয়াটাও জরুরি। তিনি পল্লির প্রধান প্রবেশ পথসহ সামনের দিকের অপর দুটি প্রবেশ পথ দ্রুত খুলে দেয়ার দাবি জানান।
মুক্তি মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম জানান, পল্লির বাসিন্দারা খুব কষ্টে আছে। কেউ কেউ ক্ষুধার জ্বালায় পল্লি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। পল্লির সার্বিক পরিস্থিতি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রেখেই তাদের মানবিক দিকটি সদয় বিবেচনার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, পল্লির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও নানা ধরনের অপরাধ দূর করতে পুলিশ সেখানে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেখানকার পুরো বিষয় এসপি স্যারসহ তাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে রয়েছে। সেখানকার নারীরা মানবেতর অবস্থার মধ্যে থাকলে বিষয়টি তাদের নজরে আনা হবে।