ঢাকাঃ

নানা জল্পনা-কল্পনা অবসান ঘটিয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ‘সমঝোতার’ পথে হাঁটছে বিএনপি! দলের একাধিক সংসদ সদস্যদের বক্তব্যে এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে।

দলীয় সংসদ সদস্যরা ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেছেন জানা গেছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ আজ বুধবার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করেন।

এ সময় বিএনপির এই সংসদ সদস্য দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করার জন্য ওবায়দুল কাদেরকে অনুরোধও করেন তিনি।

এদিন ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়া জামিন পেলে যে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, সে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, জামিন পেলে চিকিৎসকরা যদি খালেদাকে বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দেন, তখনই সরকার বিষয়টি দেখবে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ও আজ দলীয় চার সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কেবিনে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সরকারের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেলেই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন জানানো হবে।

আজ খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে হারুনুর রশীদ বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। জামিনে মুক্তি পেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা সাতজন সংসদ সদস্য রয়েছি, সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতার কাছে বলতে চাই, আমরা বিশ্বাস করি উনি রাজনৈতিক বন্দি। তাই উনার জামিনের জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার। আপনি আমলাতান্ত্রিক পরামর্শ না নিয়ে রাজনৈতিক দুরদর্শিতায় উনার জামিনের ব্যবস্থা করে দিন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘সংবিধানেই বলা আছে, একজন বয়স্ক নারী, শিশু জামিনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। তাই সাংবিধানিকভাবেই খালেদা জিয়া জামিন পাওয়ার যোগ্য।

তিনি বলেন, ম্যাডাম (খালেদা) তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং সিনিয়র সিটিজেন। কিন্তু সরকারর নানা কৌশলে তার জামিন দিচ্ছে না।

খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা বা চিকিৎসার জন্য তার বিদেশে যাওয়া প্রসঙ্গে আলাল বলেন, উনার (খালেদা) শারীরিক যে অবস্থা, তাতে দ্রুত চিকিৎসা দরকার। সেটা নিয়েই এতো আলাপ-আলোচনা চলছে। আমরা এটা নিয়ে কোনো রাজনীতি করতে চাই না।

বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দাবি, খালেদা জিয়া সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে বা সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে প্যারোল নিতে চাননি। কিন্তু এখন দলের স্বার্থে দলীয় প্রধানের শারীরিক অবস্থার বিষয়টি বিবেচনা করে প্যারোল নিয়ে সরকারের সঙ্গে দলীয় সংসদ সদস্যরা অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছেন। বর্তমানে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বিএনপিতে উদ্বেগ বেড়েছে। তাই প্যারোলে মুক্তি হলেও কোনো আপত্তি নেই- তাদের এমনটাও জানা গেছে।

বিএনপির সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার বলেন, এই মুহুর্তে নেত্রীর মুক্তি প্রয়োজন। উনাকে চিকিৎসা দিতে হবে, যে চিকিৎসা এখন আর বাংলাদেশে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

দলীয় সংসদ সদস্যরা বসে আলোচনা করে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান তিনি।

বুধবার বিকালে বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের নেতৃত্বে বিএসএমএমইএতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান জাহিদ, বগুড়া-৮ আসনের সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন। ৭৪ বছর বয়সী খালেদাকে চিকিৎসার জন্য গত ১ এপ্রিল থেকে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে।

সুপ্রিম কোর্ট ও নিম্ন আদালত মিলে খালেদার বিরুদ্ধে এখন ১৭টি মামলা বিচারাধীন।

আইনজীবীদের ভাষ্য, এর মধ্যে দুটি মামলায় (জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা) জামিন পেলেই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here