খুলনাঃ
খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলন ঘিরে চলছে নানা সমীকরণ। জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ দুই কমিটিতেই সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়েই যত আলোচনা।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সভাপতি পদ নিয়ে আলোচনায় সেভাবে আগ্রহ দেখা না গেলেও সাধারণ সম্পাদক নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। দুই কমিটিতেই সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য একাধিক নেতা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত তাদের সক্রিয় দেখা যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সম্মেলনে শেখ হারুনুর রশিদ সভাপতি ও এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর ৯ মাস পর গঠিত হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হারুনুর রশীদ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক দুর্বলতাসহ দলের একাংশের বিস্তর অভিযোগ থাকলেও আপাতত কেউ তার প্রতিদ্বন্দ্বী নেই বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
গত বছর ১৮ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা রশিদী সুজার মৃত্যু হলে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী। আগামী সম্মেলনে তিনিও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী।
১৯৯২ সাল থেকে সুজা খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। নেতাকর্মীদের কাছে তিনি ভাইজান হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ২০০২ সালে যৌথ বাহিনীর অপারেশন ক্লিনহার্টে গ্রেফতার হয়ে নির্যাতন ভোগ করেছিলেন।
সবশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার বিরুদ্ধে মামলা করলে তিনি নির্যাতনের ভয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। তার দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে জেলায় তার অনুসারীরা অনেকটা অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে। এরপর থেকেই মূলত জেলা আ’লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। এর পর থেকে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন তার অনুসারীরা।
সুজার মৃত্যুর পরও তার অনুসারীরা আরও অসহায় হয়ে পড়েন। ওই অবস্থায় তারা ভিড় করেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতার ছায়াতলে। তৃণমূলের মধ্যে গুঞ্জন চলছে সুজার অনুসারীদের মধ্য থেকেই সিনিয়র একজন পাবেন সাধারণ সম্পাদকের পদ। এছাড়া শেখ হারুনুর রশিদ গ্রুপেও শক্ত প্রার্থী রয়েছে।
জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী ছাড়াও রয়েছেন- কামরুজ্জামান জামাল, আক্তারুজ্জামান বাবু (এমপি), বটিয়াঘাটা উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আশরাফুল আলম খান, সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অসিত বরণ বিশ্বাস প্রমুখ।
তবে সাংগঠনিক দক্ষতা এবং ত্যাগী নেতাকেই সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হবে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
সম্মেলন নিয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, ‘সম্মেলনের মাধ্যমেই নেতৃত্ব নির্ধারণ হবে। কে আসবে কে যাবে সেটি শুধু দলীয় সভানেত্রীই ভালো জানেন। নির্ধারিত সময় গঠনতন্ত্র মেনেই সম্মেলন করা হবে। তৃণমূলের চাহিদা ও কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত হবে নেতা। আমরা চাচ্ছি সুন্দর একটি সম্মেলন উপহার দিতে।’
মহানগর আওয়ামী লীগ : ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে তালুকদার আবদুল খালেক সভাপতি ও মিজানুর রহমান মিজানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
এর প্রায় দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। মহানগর কমিটির এই শীর্ষ দুই নেতাই মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
কমিটির সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক এখন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন।
অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানকে গত সংসদ নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রশ্রয় দেয়া এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা হওয়ার পর অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় আছেন তিনি। এক সময়ের সঙ্গীরাও তাকে আগের মতো সময় দেয় না।
এসব কারণে নেতাকর্মীরা মনে করছেন সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটি হয়তো তার এবার হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।
তবে একটি সূত্র বলছে- সাংগঠনিক পদ ধরে রাখতে তিনি জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে আর যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- সদর থানা আ’লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ, আশরাফুল ইসলাম ও আবুল কালাম আজাদ কামাল, দৌলতপুর থানা আ’লীগের সভাপতি সৈয়দ আলী প্রমুখ।
তৃণমূলের দাবি নতুনদের মধ্যে সাংগঠনিক ও সামাজিক কার্যক্রমে বেশি সক্রিয় দেখা যাচ্ছে- অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামকে।
জানতে চাইলে নগর সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, দল যাকে পছন্দ করবে তিনি হবেন পরবর্তী নেতা। আমরা চাইছি সুষ্ঠু ও সুন্দর সম্মেলনের আয়োজন করতে। দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দেয়া হবে। নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি আসবে। সর্বোপরি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।’