ঝিনাইদহঃ

তখন রাত প্রায় সাড়ে ৮ টা। ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মেইন বাস ষ্ট্যান্ডের একটি চায়ের স্টলের বেঞ্চে বসে ৭/৮ বছরের একটি শিশু অঝোরে কাঁদছে। আর যাকে কাছে পাচ্ছে জড়িয়ে ধরে বলছে আমি বাড়ি যাবো। আমাকে একটু নিয়ে চলো। অবুঝ শিশুটির কান্নায় অনেকে কাতর হয়ে মন ভোলাতে খাবার কিনে দিচ্ছেন। আবার পথচারীরা একটু দাঁড়িয়ে দেখে সটকে যাচ্ছেন। কিন্ত শিশুটিকে তার বাড়ি পৌছানোর জন্য কেউ এগিয়ে আসছেন না।

এদিকে রাত যত বেশি হচ্ছে অচেনা স্থানে অজানা মানুষদের সামনে আতঙ্কে শিশুটির কান্না ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। জিঞ্জাসা করলে নিজের নাম বলছে চাঁদ এবং বাবার নাম উজ্জল আর বাড়ি চুয়াডাঙ্গা শহরে বলতে পারলেও পরিবারের কারও সাথে যোগাযোগের জন্য কোন মোবাইল নম্বর বলতে পারছে না। আবার এতো রাতে এতটুকু শিশুকে অচেনা কারও কাছে দেয়াটাও ঠিক হবে না। রাত হয়ে যাওয়ায় এ রুটের যাত্রিবাহী গাড়িও অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। পাশে দাঁড়িয়ে নানা কথা ভাবতে ভাবতে শিশুটাকে নিরাপদ কোন স্থানে নেয়া বেশি জরুরী বলে মনে করে সাংবাদিকদের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বললেও তারাও এতো রাতে শিশুটিকে অপরিচিত কারও হাতে তুলে না দেয়ার পরামর্শ দিলেন। তাদের পরামর্শেই রাত সাড়ে ৯ টার দিকে শিশুটিকে নিয়ে কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে নিয়ে আসলে তারা শিশু চাঁদের পরিবারের সদস্যদের ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার সংগ্রহের জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। প্রায় ২ ঘন্টা অবিরাম চেষ্টার পর শিশুটির আসল পরিচয় ও পরিবারের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তাদের সাথে কথা বলেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। এরপর তিনি খানিকটা চিন্তামুক্ত হন। কথাগুলো বললেন রাতে শিশুটিকে সঙ্গ দেয়া কালীগঞ্জের হেলথ অফিসের পিযুষ বিশ্বাস নামের এক কর্মকর্তা। শিশুটির নাম চাঁদ তার বাবা উজ্জল একজন মটর গাড়ির হেলপার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা শহরের ইসলাম পাড়ায়।

কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি জামির হোসেন জানান, শিশু চাঁদের পরিবারের লোকজনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জানা যায় সোমবার শিশুটি বন্ধুদের সাথে ঘুরতে ঘুরতে রেল স্টেশনে আসে। তারা স্টেশন ইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনের বগিতে উঠে যাওয়ার পর পরই ট্রেন ছেড়ে দেয়। এ সময় তার অন্য বন্ধুরা ঝাপ দিয়ে নেমে গেলেও চাঁদ নামতে পারেনি। পরে কালীগঞ্জের মোবারকগঞ্জ রেল ষ্টেশনে তাকে নামিয়ে দিলে বিকাল থেকে শিশুটি কালীগঞ্জ শহরে ঘুরে বেড়িয়ে সন্ধ্যার পর মেইন বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য কাঁদতে থাকে। এরপর লোক মাধ্যমে প্রেসক্লাব পর্যন্ত পৌছলে রাতেই তার আসল পরিচয় বের করে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বললে কালীগঞ্জ দুলালমুন্দিয়া গ্রামের শিশু চাঁদের এক আত্বীয় ইন্তাজ আলীর নিকট হস্তান্তর করতে বললে চাঁদকে রাত সাড়ে ১১ টায় হস্তান্তর করা হয়। চাঁদ ফিরে পেলো তার পরিবারকে।

কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, হারানো শিশুটিকে তার স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে যে মহৎ কাজটি করেছেন সে জন্য প্রেসক্লাবের সকল সাংবাদিকদের সাধুবাদ জানাতে হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here