ঝিনাইদহঃ

শাসক দল আওয়ামীলীগের শক্ত দুই গ্রুপের কোন্দলে হরিশংকরপুর ইউনিয়ন কার্যত আতংকের জনপদে পরিণত হয়েছে। দুটি জোড়া খুনের পর মামলা, ঘরবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটে ৪/৫টি গ্রামে রাতে বেলায় নেমে আসে সুনশান নীরবতা। পরাণপুর গ্রামের বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম পাহারা দিচ্ছেন তারা ভাঙ্গাচোরা বাড়ি, যে বাড়িটি গত সপ্তাহে লুট হয়েছে। বাড়ির টিউবওয়েল খুলে নিয়ে যাওয়ায় নদীর পানিতে ওজু করতে হচ্ছে। খাট-পালঙ্গ লুট করায় ঘরের মেঝেতে ঘুমাতে হচ্ছে। ছেলেরা হামলা-মামলা ভয়ে বাড়ি ছাড়া। বৃদ্ধা পারুল বেগম পাহারা দিচ্ছেন তার জামাই নাজিম শেখের বাড়ি। নাজিম শেখের বাড়িঘরেও কিছু নেই। সব লুট হয়ে গেছে। এখন ৬ টি গ্রামের ৪ শতাধিক পরিবারের পুরুষ ছেলেরা বাড়িতে নেই। মেয়েরা বাড়িতে থাকলেও আছেন আতংকে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গত ৪ জুন হামলায় নিহত হন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামে নিহত হন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের দুই নেতা আলাপ শেখ ও নুর ইসলাম। নিহতরা হচ্ছেন ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা খন্দকার ফারুকুজ্জামান ফরিদ গ্রুপের। আর হামলাকারীরা হচ্ছে একই দলের আরেক নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাসুমের সমর্থক। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে ঝিনাইদহ সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৬ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ বলছে, বাকি আসামী গ্রেপ্তারে তারা তৎপর রয়েছেন। সরেজমিনে হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে গোটা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ইউনিয়নের পরানপুর, শিতারামপুর, চন্দ্রজানি, কোদালিয়া, সুতুলিয়া ও হরিশংকরপুর গ্রামের বেশ কিছু পরিবারে পুরুষ ছেলেরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে রয়েছে। যে বাড়িগুলোতে বয়োবৃদ্ধ নারীরা অবস্থান করছেন। গ্রামবাসি অভিযোগ স্থানীয় দুই নেতার ক্ষমতার দ্বন্দে প্রায় সংঘর্ষ হয়। লুটপাট হয় বাড়িঘর। গত ১০ বছরে এই ইউনিয়নে উভয়পক্ষের ৫ জন নিহত হয়েছেন। এরা হলেন, আলাপ শেখ, নুর ইসলাম, ছানার উদ্দিন, জাহিদুল ইসলাম ও বাদল কুন্ডু।

বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাসুম মুঠোফোনে জানান, একটি মহল ঘটনা ঘটানো এবং ইউনিয়নটি অশান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। যেটা বুঝতে পেরে তিনি প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তাকে নিয়ে এলাকায় শান্তি সভা করেছেন। তারপরও ছোট ছোট ঘটনা ঘটিয়ে বড় ঘটনার পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে।

তিনি জানান, তার সমর্থকদের ৩৩ টি বাড়ি ভাংচুর হয়েছে। এখনও ৫ গ্রামের কমপক্ষে ৪ শ পুরুষ মানুষ গ্রামছাড়া। মিটার ভেঙ্গে দেওয়ায় প্রায় ৩০ টি পরিবার অন্ধকারে। ২৭ টি পরিবারের টিউবওয়েলের মাথা খুলে নেওয়া হয়েছে, যারা পানির কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় প্রায় ৪৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার ফরিদুজ্জামান ফরিদ অভিযোগ খন্ডন করে বলেন, হত্যাকান্ডের সুযোগটি কাজে লাগিয়ে পাশের ইউনিয়নের কিছু মানুষ লুটপাট করেছে। তিনি চেষ্টা করে এগুলো বন্ধ করেছেন, এখন এলাকা শান্ত।

তিনি আরো জানান, সামাজিক দল করলেই একজন খারাপ হয় না, যে কারনে পালিয়ে যাওয়া অনেককে তিনি নিজে বাড়ি উঠিয়ে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, হত্যাকান্ড ঘটার পর কিছু ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রন করেছেন। ভাংচুর ঠেকিয়েছেন, লুট হওয়া মালামালও উদ্ধার করেছে পুলিশ। এলাকায় পুলিশ টহল আছে। তবে পুরুষ মানুষগুলো বাড়িছাড়ার তথ্য তার কাছে নেই। তথ্য পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here