ফরিদপুরঃ

রূপপুর বালিশ কাণ্ডকে হার মানিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গড়েছে দুর্নীতির নতুন নজির। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে আড়াল করাতে একটি পর্দা কিনতে দাম দেখিয়েছে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। 

ইতোমধ্যে হাসপাতালটির যন্ত্র ও সরঞ্জাম কেনাকাটাতেই অন্তত ৪১ কোটি টাকার দুর্নীতির প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

এ অভিযোগ ওঠে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২০১২-২০১৬ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্পের নামে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স অনিক ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে। তবে এর সাথে সে সময়কালে হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তারাও সম্পৃক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নাগরিক টিভির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স অনিক ট্রেডাসের প্রায় ১০ কোটি টাকার বিল বছর খানিক আগে আটকে দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরে বিল পরিশোধের আবেদন জানিয়ে ২০১৭ সালের ১ জুন রিট করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসে সাপ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালটির ১১ কোটি ৫৩ লাখ ৪৬৫ টাকার মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনাকাটায় বিল দেখানো হয়েছে ৫২ কোটি ৬৬ লাখ ৭১ হাজার ২০০ টাকা। এই একটি কেনাকাটাতেই মেসার্স অনিক ট্রেডার্স বাড়তি বিল দেখিয়েছে ৪১ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৩৭ টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আইসিইউতে ব্যবহৃত একটি পর্দার দাম ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছাড়াও একটি অক্সিজেন জেনারেটিং প্ল্যান্ট কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। একটি ভ্যাকুয়াম প্ল্যান্ট ৮৭ লাখ ৫০ হাজার, একটি বিএইইস মনিটরিং প্ল্যান্ট ২৩ লাখ ৭৫ হাজার, তিনটি ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মেশিন ৩০ লাখ ৭৫ হাজার, আর একটি হেডকার্ডিয়াক স্টেথোসকোপের দাম ১ লাখ ১২ হাজার টাকা। এমন অবিশ্বাস্য দামে ১৬৬টি যন্ত্র ও সরঞ্জাম কিনেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মেসার্স অনিক ট্রেডাসের রিটের পর জানা যায়, ওই সময়কালে হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তারাও এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই অবস্থায় ছয় মাসের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ মাহমুদ বাশার বলেন, ‘এক রোগী থেকে আরেক রোগীকে আড়াল করার পর্দার দাম ধরা হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাজার মূল্যের সাথে কোনোভাবেই এটি সঠিক মূল্য নির্ধারণ বলা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘যারা দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছিলেন তারা যেহেতো এ ঘটনায় সম্পৃক্ত। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শুধু প্রশাসনিক নয়, আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। তবে সেটা দুদক তদন্ত সাপেক্ষে নির্ধারণ করবে।’

তবে এ বিষয়ে মেসার্স অনিক ট্রেডাসের রিট পিটিশনার ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভিডিও …

দুর্নীতির নতুন নজির গড়লো ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

রূপপুর বালিশ কান্ডকে হার মানালো ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল! রোগীর বেড আড়ালে ব্যবহৃত একটি কাপড়ের পর্দার দাম- ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। (নাগরিক টিভির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখুন বিস্তারিত)

Posted by Nojor24 on Tuesday, September 3, 2019

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here