সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ

গায়ে কোট, হাতে ঘড়ি, চোঁখে চশমা, মুখে দাড়ি, পোশাকে বেশ পরিপাটি। দেখে ভদ্র লোকই মনে করবেন যে কেউ। তবে এই ভদ্রবেশী লোকটি ভয়াবহ প্রতারক। কখনো তিনি মধু ব্যবসায়ী আবার কখনো মোবাইল টাউয়ার ব্যবসায়ী। প্রতারণা করে এভাবেই সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দুই ব্যবসায়ীর নিকট থেকে ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার (৩ ফেব্রæয়ারী) সাতক্ষীরা এসপি বাংলোর পেছনের একটি বাসা থেকে মোটা অংকের এ টাকা হাতানোর ঘটনা ঘটে। টাকা নেওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যেই উধাও হয়ে যান তিনি। এরপর থেকেই নিখোঁজ। টাকা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দুই ব্যবসায়ী।

শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের তারানীপুর গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী আব্দুস সবুর। তিনি খুইয়েছেন নগদ ৬ লাখ টাকা। গত ১৯ ফেব্রæয়ারী আকষ্মিক আব্দুস সবুরের বাড়িতে হাজির হন ভদ্রবেশী দুই ব্যক্তি। পরিচয় দেন তারা টাওয়ার কোম্পানীর কর্মকর্তা। তবে কোন মোবাইলের টাওয়ার সেটি জানাননি তারা।

ঘের ব্যবসায়ী আব্দুস সবুর বলেন, আমার জমিতে মোবাইল টাওয়ার করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানায় ওই দুই ব্যক্তি। তারা বলেন, আমার জমিতে দুই তলা একটি বাড়ি তৈরী করে তার উপর টাওয়ার বসানো হবে। বাড়ি তৈরী খরচ তারা করবেন। আমাকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এসব কথা জানিয়ে ফোন নম্বর নিয়ে ফিরে আসে। এরপর মোবাইল ফোনে কল দিয়ে সাতক্ষীরা শহরে এসপি বাংলোর পেছনে অফিসে আসতে বলে।

তিনি আরও জানান, এরপর সাতক্ষীরা শহরে আসার পর এসপি বাংলোর পেছনে উত্তর পলাশপোল জীবনবীমা করপোরেশনের সাতক্ষীরার ডেপুটি ম্যানেজার (সেলস) দীপংকর মন্ডলের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে একটি ফরম পূরণ করনো হয়। ফরম পূরণের পর বলে, আপনাকে ৩০ লাখ টাকা দিবো কিন্তু আমাদের ৬ লাখ টাকা দিতে হবে। আগামী (৩ ফেব্রæয়ারী) জমির কাগজপত্র, ভোটার আইডি কার্ড ও ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর নিয়ে সকালে আসবেন।

ব্যবসায়ী আব্দুস সবুর নির্ধারিত দিনে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে হাজির হন ওই বাড়িতে। টাকাটিও তাকে বুঝিয়ে দেন।

ওই দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্যামনগর উপজেলা সদরের একজন মুদি দোকানীও তাকে দেন ৭ লাখ টাকা। তাকে বলা হয়, তার মধু ফ্যাক্টরী রয়েছে। মধুর ব্যবসা করতে সাতক্ষীরায় এসেছেন। মধুর ব্যবসার জন্য তাকে দেওয়া হবে ২০ লাখ টাকা। কিন্তু ফ্যাক্টরী যেহেতু তার কাছ থেকে মধু কিনবে সেজন্য তাকে জামানত দিতে হবে ৭ লাখ টাকা। জামানতের সেই টাকাটি ওই ভদ্রবেশীকে বুঝিয়ে দেন ওই মুদি দোকানী।

তিনি বলেন, কথোপকথনের সময় কোনভাবেই মনে হয়নি এমন প্রতারণার ফাঁদে পড়বো। আমি বিভিন্ন জায়গা থেকে লোন করে টাকাগুলো একত্রিত করে তাকে দিয়েছি। টাকা দেওয়ার সময় কোন কাগজপত্র ছিল না। তবে আমি টাকা দেওয়ার সময় ফোনে গোপনে একটা ছবি তুলে রেখেছিলাম।

মঙ্গলবার (৩ ফেব্রæয়ারী) সকাল সাড়ে ৯টা ও সাড়ে ১০টার দিকে পৃথক পৃথকভাবে টাকা নেওয়ার পর ঘরে বসিয়ে রেখে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায় ওই ভদ্রবেশী লোক। এরপর থেকেই নিখোঁজ তিনি।

প্রতারণার স্বীকার হওয়া ওই দুই ব্যক্তি জানান, ওই ভদ্রলোক নিজেকে খুলনার বটিয়াঘাটা থানার বিরেট উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত. মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে আজম খান হিসেবে পরিচয় দেয়। সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের আবুল হোসেন ও জামান নামে পরিচয় করিয়ে দেয়। তবে জানতে পেরেছি ওই ঠিকানাটি সঠিক নয়। তিনটি মোবাইল নম্বর থেকে যোগাযোগ করা নম্বর এখন বন্ধ।

এদিকে, বাসা মালিক শহরের উত্তর পলাশপোল জীবনবীমা করপোরেশনের সাতক্ষীরার ডেপুটি ম্যানেজার (সেলস) দীপংকর মন্ডল বলেন, আমি তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানি না। এক মাস আগে ভাড়া দিয়েছিলাম। তাদের কাছে ভোটার আইডি কার্ড চেয়েছিলাম এখনো দেয়নি।

একজনের পরিচয় না জেনে কিভাবে বাসা ভাড়া দিয়েছেন এমন প্রশ্নের তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে প্রতারণার স্বীকার হওয়া ওই দুই ব্যবসায়ীর অভিযোগ বাসা মালিক এই প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

বাসাটি দেখাশোনা করার দায়িত্বে রয়েছেন শহরের সদর থানার সামনে টিপটপ লন্ড্রির মালিক বাবলু। ওই ভদ্রবেশী প্রতারকদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনিও কোন উত্তর দেননি।

ঘটনার বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো কেউ থানাতে অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here