ঢাকাঃ

জামিনে মুক্ত হয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।

প্রায় রাতে ঘুমের মধ্যে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠতেন তিনি। সে কারণে উন্নতর চিকিৎসার্থে গত ২২ সেপ্টেম্বর মিন্নিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।

২১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টায় বরগুনা লঞ্চঘাট থেকে এমভি শাহরুখ লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন মিন্নি। তখন থেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন তিনি।

মাথার ছাতা হয়ে সার্বক্ষণিক সঙ্গে থাকছেন বাবা কিশোর।

ইতিমধ্যে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে ফের আলোচিত হচ্ছেন মিন্নি। ঢাকায় তিনি কি করছেন, তার মানসিক অবস্থা এখন কেমন যে বিষয়ে বেশ কৌতূহলী দেশবাসী।

জানা গেছে, ঢাকায় যেখানেই যাচ্ছেন মিন্নি সেখানেই ভিড় জমে যায়। মিন্নির ছবি তুলতে থাকে জনতা।

সম্প্রতি মিন্নির বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে সাদা রংয়ের সেলোয়ার কামিজ পরা হাস্যজ্জ্বল মিন্নিকে দেখা গেছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকায় নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন মিন্নি। সেখানে তাকে দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়।

বিভিন্ন দোকানে ছড়িয়ে পড়ে বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যা মামলার আসামি আয়সা সিদ্দিকা মিন্নি এসেছেন।

মিন্নি দেখতে অনেকেই দোকান ফেলে চলে আসেন। ছবি তোলেন কেউ কেউ। আর সেসব ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন তারা।

ছবিতে মিন্নির সঙ্গে তার বাবাকেও দেখা গেছে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার রাজধানীর একটি মার্কেটে গিয়েছিলেন মিন্নি। এসময় নিজের জন্য জামা-কাপড় কেনেন মিন্নি। দোকানিরাও তাকে বিশেষ ছাড় দেন। এসময় বেশ হাসিখুশি দেখা গেছে তাকে।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, আগে সব মানুষ আমার মেয়ের দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকাতো। কিন্তু এখন দেখলে মানুষ উৎফুল্ল হয়, তাকে সম্মান জানায়।

মিন্নির জামিন হওয়ার পর আর রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সেই ভিডিও প্রকাশের পর পুরো চিত্র পাল্টে গেছে বলে জানান মিন্নির বাবা।

তিনি বলেন, মেয়েকে জামা-কাপড় কিনে দিলাম। দোকানদাররা খাওয়াতে চেয়েছে। দামে ডিসকাউন্ট দিয়েছে। আমার মেয়েকে একনজর দেখতে পুরো মার্কেটের মানুষ একত্র হয়ে গিয়েছিল সেদিন।

তিনি আরও বলেন, মানুষ শুধু জড়োই হয় না তার ছবিও তুলে। ছবি তোলার জন্য ভিড় সামলানো যায় না। আমি মনে করি এটা মানুষের সম্মান।

এই সম্মানের মর্যাদা যেন আমার মেয়ে রাখতে পারে সেজন্য আমি দোয়াপ্রার্থী।

গত ২৯ আগস্ট জামিনে মুক্তির পর বেশ অসুস্থ ছিলেন মিন্নি।

চলতি মাসের শুরুতে মিন্নির শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে তার স্বজনরা বলেছিলেন, সদা হাস্যোজ্জ্বল, চঞ্চল ও স্বজনদের সঙ্গে সদালাপী ছিলেন মিন্নি। কিন্তু জামিনে মুক্তির পর অনেক স্বজনের মাঝেও একাকিত্বে ভুগছেন সেই মিন্নি। শারীরিকভাবে অসুস্থ মিন্নি এখন স্বামী রিফাত শরীফের স্মৃতিতে কাতর। একরাশ বিষণ্নতা নিয়ে নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন তিনি। এ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন তার বাবা-মা।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেছিলেন, দুই হাঁটুতে কালো দাগ রয়েছে মিন্নির। হাঁটুর ব্যথায় হাঁটতে পারে না সে। চঞ্চল ও সদালাপী মিন্নি এখন কারও সঙ্গে কথা বলে না। খেতে চায় না কিছুই। একাকী কাঁদে। রিফাতের স্মৃতি মিন্নিকে আপ্লুত করে তুলছে। ঘুমের মধ্যেও চিৎকার করে কেঁদে ওঠে মিন্নি।

প্রসঙ্গত, বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে দুই শর্তে জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। যে দুই শর্তে মিন্নিকে জামিন দেওয়া হয়েছে তা হলো, মিন্নি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না এবং তাকে তার বাবার জিম্মায় থাকতে হবে।

২৯ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। জামিনে থাকা অবস্থায় মিন্নি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললে তার জামিন বাতিল হবে বলেও আদেশে উল্লেখ করেন আদালত।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here