রাবিঃ

রাজশাহীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ এতদিন শোনা গেলেও উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে কাউকে শনাক্ত করা যায়নি।

তবে এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে এক চাকরিপ্রার্থীর স্ত্রীর সঙ্গে উপউপাচার্য ড. চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়ার নিয়োগবাণিজ্যের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে।

এই ফোনালাপ ফাঁসের পর গত সোমবার থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি হয়ে গেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আলোচনার মূল বিষয়।

রাবিতে আরেকজন উপউপচার্য থাকলেও বর্তমান উপাচার্য ড. আব্দুস সোবহান তদবির করে চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়াকে দ্বিতীয় উপউপাচার্য নিয়োগ করেন।

শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে চৌধুরী জাকারিয়ার সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীর স্ত্রীর ফোনালাপের একটি কপি সবুজদেশের হাতে এসেছে।

ফোনালাপটি হুবহু স্ক্রিপ্ট আকারে তুলে দেয়া হলো-

উপউপাচার্য: হ্যাঁ, সাদিয়া। আমি প্রফেসর জাকারিয়া (চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া), প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর।

চাকরিপ্রত্যাশীর স্ত্রী: আসসালামু আলাইকুম স্যার।

উপউপাচার্য: ওয়ালাইকু আসসালাম। আচ্ছা মা, একটা কথা বলো তো, তোমরা কয় টাকা দেয়ার জন্য রেডি আছ।

চাকরিপ্রত্যাশীর স্ত্রী: স্যার, সত্যি কথা বলতে…

উপউপাচার্য: না না, সত্যি কথাই তো বলবা। ওপরে আল্লাহতায়ালা, নিচে আমি।

চাকরিপ্রত্যাশীর স্ত্রী: অবশ্যই, অবশ্যই। স্যার, আপনি যেহেতু তার অবস্থা জানেন, আরেকটা বিষয় এখানে স্যার, সেটা হচ্ছে- আপনি হুদার… মানে, এমনিতে সে কতটা স্ট্রিক…, আপনি বোধহয় এটাও জানেন স্যার, একটু রগচটা ছেলে।

উপউপাচার্য: আচ্ছা রাখো রাখো, এখান থেকে কথা বলা যাবে না।

চাকরিপ্রত্যাশীর স্ত্রীর সঙ্গে নিয়োগ নিয়ে দর-কষাকষির বিষয়ে জানতে চাইলে রাবির উপউপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘কী জানি, কোন মেয়ে কখন আসছে।

ওই নারীর সঙ্গে দর-কষাকষির বিষয়ে কথা বলেছেন এবং সেটা রেকর্ড হয়েছে বলে জানালে উপউপাচার্য জাকারিয়া আরও বলেন, ‘আমি মেয়েদের সঙ্গে কথা তো কমই বলি, টেলিফোনে আমি বলি যে, তোমার সঙ্গে দেখা করারও দরকার নেই, কথা বলারও দরকার নেই।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইন বিভাগে নিয়োগের জন্য যে প্রার্থীর স্ত্রীর সঙ্গে প্রফেসর চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া অর্থ লেনদেনের বিষয়ে দর-কষাকষি করেছিলেন শেষ পর্যন্ত সেই প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়নি।

সম্প্রতি হওয়া নিয়োগে বাদ পড়েন প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ওই চাকরিপ্রার্থী।

এদিকে উপউপাচার্যের এই ফোনালাপটি গত বছর নভেম্বরের বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ওই চাকরিপ্রত্যাশীর নাম মোহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে অনার্সে ৩.৬৫ জিপিএ ও মাস্টার্সে ৩.৬০ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

আইন অনুষদে সেরা ফলের জন্য ২০১৭ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক এবং ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক লাভ করেন।

গত বছরের শেষ দিকে আইন বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আবেদন করেছিলেন। এই বিভাগে তিনজন প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হলেও নুরুল হুদা বাদ পড়েছেন।

অন্যদিকে এই তিনটি প্রভাষক পদের মধ্যে উপউপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়ার জামাই সাইমুন তুহিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডর মেয়ে নুসরাত সুলতানা ও বনশ্রী রানী নামের রাবির আইন বিভাগ থেকে পাস করা আরেকজন নিয়োগ লাভ করেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here