রংপুর প্রতিনিধিঃ

বনিবনা না হওয়াতে পরিকল্পিতভাবে শিশু জিহাদকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে তার বাবা ও সৎ মা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে শরীরে গরম পানি নিক্ষেপ করে তারা। হত্যার ১ মাস ১৭দিন পর এমন নৃশংসতম হত্যাকান্ডের মুল রহস্য উদ্ঘাটন করে রংপুর পিবিআই। এঘটনায় নিহত শিশুর বাবা, সৎ মাসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এঘটনায় ব্যবহৃত একটি ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার ও পিকআপ গাড়ি জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, বাবা জিয়াউর রহমান, সৎ মা আলেয়া মনি (১৯), শশুর আইয়ুব আলী (৫৫) ও পিকআপ ড্রাইভার ইসমাইল (২৬)।

মঙ্গলবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিপিআই রংপুরের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন।

তিনি জানান, চলতি বছরের ১৫ জুলাই রাতে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার রামডাঙ্গা ফরেষ্ট ও সিংগাহারা নদীর তীরে একটি তালাবদ্ধ ট্রাংক পরে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পরে বিষয়টি পুলিশকে অবগত করা হলে পরদিন সকালে সিআইডি, পিবিআই ও ডিমলা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ট্রাংকটি খুলে বেডশীট ও কাথা মোড়ানো অবস্থায় একটি অর্ধ গলিত লাশ পায়। লাশটি ঝলশানো ও অর্ধগলিত থাকায় তার পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। স্থানীয়রাও নিহত শিশুটিকে চিনতে পারেনি। পরে ময়নাতদন্ত শেষে অজ্ঞাত লাশ হিসাবে ডিমলা কবরস্থানে দাফন করা হয়। এব্যপারে ওইদিন ডিমলা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। বিষয়টি স্পর্শকাতর, নৃশংসতম এবং ক্লু-লেস ঘটনা হওয়ায় পিবিআই রংপুর ২০ জুলাাই মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। এঘটনার ১ মাস ১৭ দিন পর একটি স্পেশাল টিম তথ্য প্রযুুক্তি ও একাধিক বিশ্বস্ত সোর্সের যথাযথ ব্যবহার করে হত্যাকান্ডের রহস্য, প্রক্রিয়া ও মৃত ব্যক্তির পরিচয় নৃশংসতম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের সনাক্ত করা হয়। পরে দিনাজপুরের খানসামায় একটি এনজিওতে কর্মরত নিহত শিশুটির বাবা জিয়াউর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মতে একই জেলার বিরল উপজেলার ভাড়া বাড়ি থেকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও শিশু জিহাদের সৎ মা আলেয়া মনি (১৯), ও তার শ্বশুর আইয়ুব আলী (৫৫) কে গ্রেফতার করা হয়। এসময় একটি ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত বাবা ও সৎ মা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, তাদের সাথে বনিবনা না হওয়াতে পরিকল্পিতভাবে শিশু জিহাদকে গত ১৪ জুলাই রাতে দিনাজপুরের বিরলের ভাড়া বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে তারা। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে গরম পানি নিক্ষেপ করে। হত্যাকান্ডের ঘটনা গোপন রাখতে বাড়ীতে ব্যবহৃত একটি স্টিলের ট্যাংকে জিয়াউর, আলেয়া ও আইয়ুব আলী মিলে বেডশীট- কাথা দিয়ে লাশটি পেঁচিয়ে ঢুকিয়ে রাখে। স্থানীয় একটি দোকান থেকে দুইটি চাইনিজ তালা কিনে এনে ট্রাংকটি তালাবদ্ধ করে । ১৩ হাজার টাকায় একটি পিকআপ ভাড়া করে লাশ ও ট্রাংকটি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার রামডাঙ্গা ফরেষ্ট ও সিংগাহারা নদীর তীরে ফেলে দিয়ে আসে। তাদের সনাক্ত মতে রেজিঃ নং ঢাকা মেট্রো ন-১১-৯৬০৭ নামের পিকআপ জব্দ করা হয়। মালিক ও ড্রাইভার ইসমাইল(২৬) কে গ্রেফতার করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও রংপুর পিবিআই এর এসআই মোঃ ইকরামুল হক বলেন, তিনি তদন্ত করছেন। তাকে পিবিআই’র একটি স্পেশাল টিম সহায়তা করছেন। মামলার তদন্ত অব্যহত আছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here