ঝিনাইদহঃ

সকাল থেকে চলে আনন্দ উল্লাস। শিশুদের পাশাপাশি এসেছেন অভিভাবকরা। পরীক্ষার পর রোববারই ভালো ফল করা শিশুরা একত্রিত হয়েছিল। ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে নলডাঙ্গা ভূষণ শিশু একাডেমীটি এবারও ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় উপজেলার মধ্যে ভালো ফল করেছে। একাডেমীটির ৯২ জন শিশু পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩২ জন বৃত্তি পেয়েছে। যার মধ্যে ২৫ জন ট্যালেন্টপুলে, ৭ জন সাধারণ গ্রেডে। বাকি ৬০ জনই জিপিএ-৫ পেয়েছে।

অথচ শিশুদের পড়ালেখার কথা চিন্তা করে ৪০ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত এই শিশু একাডেমীর শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের চিন্তার অন্ত নেই। তারা সারাক্ষণ আতংকে থাকেন কখন দেড়শত বছরের পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে পড়ে। ঘটে যায় কোনো দূর্ঘটনা। অর্থের অভাবে তারা ভবন নির্মান করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ মোঃ শাহী আলম।

৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় এ বছর অংশ নেওয়া শিশুদের মধ্যে বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের রোববার খবর দিয়ে প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসেন কর্তৃপক্ষ। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে হাজির হন। সকাল ৯ টার দিকে সব শিশুর হাতে রজনীগন্ধা ফুল তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা জানান শিক্ষকরা। এরপর মিষ্টিমূখ। তারপর ভালো ফল করা শিশুদের অভিভাবকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়। শেষে ছবি উঠানো। সবকিছুই হয়েছে আনন্দ আর উল্লাস করে। শিশুরা চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করে।

শিশু একাডেমীর অধ্যক্ষ মোঃ শাহী আলম জানান, ১৮৬৬ সালে নলডাঙ্গা’র ভূষণ রাজা প্রতিষ্ঠা করেন নলডাঙ্গা ভূষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেই বিদ্যালয়ের কিছু জায়গা ভাড়া নিয়ে ১৯৮১ সালে এলাকার শিক্ষানুরাগীরা প্রতিষ্ঠা করেন নলডাঙ্গা ভূষণ শিশু একাডেমী। যে শিশু একাডেমীর পাঠদান চলে ভুষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনে। যে ভবনের বয়স প্রায় দেড়শত বছর। এই পুরাতন ভবনে তারা পাঠদান করে যাচ্ছেন।

অধ্যক্ষ মোঃ শাহী আলম জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১৪ টি কক্ষ রয়েছে। যার মধ্যে নতুন ভবনটিতে ৬ টি কক্ষ, আর পুরাতন ভবনে ৮ টি। নতুন ভবনে অফিস রয়েছে। বাকি কক্ষগুলোতে ক্লাস নেওয়া হয়। বর্তমানে তাদের ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অল্প পয়সা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে থাকেন। যে কারনে প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে ১৫ জন শিক্ষক আর ৬ জন কর্মচারির বেতন হয় কোনো রকমে। এরপরও তারা কিছু অর্থ জমা করে নতুন ভবনটি করেছেন। এখন ভবনের অভাবে প্রতিষ্ঠানটি চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

শিশু একাডেমীর শিক্ষক আব্দুল হামিদ জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষঅয় অংশ নিয়ে প্রতিবছর শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করেন। ২০১৭ সালে ১৬ জন বৃত্তি পেয়েছিল আর ২০১৮ সালে পায় ২২ জন। এবার তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ৯২ জন অংশ নিয়ে ২৫ জন ট্যালেন্টপুলে, ৭ জন সাধারণ গ্রেডে আর ৬০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এই সাফল্য এসেছে অভিভাবক, শিক্ষকমন্ডলী আর শিশুদের পড়ার প্রতি আগ্রহের কারনে। তারা আগামীতেও এ জাতীয় সাফল্য ধরে রাখতে চান।

শিশু মিহিন রহমান, রাজ জানাহ ফাতেম, রাফসান লাবীব, রাইশা তাবাসসুম, সাহাদ, তামজিদ, নুরানী হাইসহ বেশ কয়েকটি শিশু খুবই ভালো ফল করেছে। তাদের প্রতিষ্ঠানের শিশুরা উপজেলার মধ্যে সর্বচো নাম্বার পেয়েছে। ওই সব শিশুরা খুবই আনন্দ প্রকাশ করেন। তারা আগামীতে আরো ভাল ফল করার আশা ব্যক্ত করে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here