খুলনা ব্যুরোঃ

রাত পোহালেই খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন । এ লক্ষ্যে বর্ণিল সাজে সেজেছে খুলনা মহানগরী। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এক ঝাঁক নবীণ-প্রবীন প্রার্থীর তৎপরতায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে দলীয় শিবিরে। প্রার্থীদের ছবিসহ তোরণ, ফেষ্টুন বিলবোর্ডে ছেঁয়ে গেছে গোটা মহানগরী। এসব প্রচারণায় শীর্ষ নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণই মূল উদ্দেশ্য। প্রার্থীদের লবিং-গ্রুপিং এবং কর্মী-সমর্থকদের বিরামহীন শোডাউনে মুখরিত রাজনৈতিক অঙ্গন।

গত দু’দিন খুলনার জনপদে গুঞ্জন আর জল্পনা-কল্পনার ঝড় ওঠে। ‘কে হচ্ছেন সভাপতি বা কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক।’ পরিবর্তন না পুর্নবহাল না চমক এমন সব জল্পনা-কল্পনায় চলে দিনভর।

সব মিলে উৎসবের পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দেখা গেছে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে। নিজ দলে দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে খুলনায় সম্মেলনে মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব গড়ে তোলা অনেকটাই চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

একাধিক সূত্র জানায়, দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান মাথায় রেখে ত্যাগী-পরিক্ষিত ও ক্লিন ইমেজের তারুণ্য নির্ভর কর্মীবান্ধব নেতা নির্বাচন করতে চাইছে নীতি-নির্ধারণী মহল। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আমলনামা সংগ্রহ করা হয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে।

সূত্রটি আরও জানায়, মহানগরের সভাপতি পদে পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা নেই। ওইপদে বর্তমান সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক এখন পর্যন্ত অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে বড় ধরণের চমকের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে- বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র এবং যুবলীগ নেতা এমডিএ বাবুল রানা হতে যাচ্ছেন পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক। এক্ষেত্রে বাদ পড়তে পারেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান।

এর থেকেও বড় চমক অপেক্ষা করছে জেলা আওয়ামী লীগে। সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদকে বাদ দিয়ে সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাড. সোহরাব আলী সানাকে বেছে নেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত অধিকারীকে পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবছে নীতি-নির্ধারকরা। যদিও চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

দলীয় সূত্র জানায়, নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য লড়াই করছেন পাঁচ নেতা। তারা হলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিজান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা এমডিএ বাবুল রানা, সদর থানা সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি এ্যাড. সাইফুল ইসলাম, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ফারুক আহমেদ ও মো. আশরাফুল ইসলাম।

জেলার সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত অধিকারী, যুগ্ম সম্পাদক সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল, আকতারুজ্জামান বাবু এমপি, বটিয়াঘাটা উপজেলা সভাপতি আশরাফুল আলম খান, সাবেক ছাত্রনেতা এস.এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা ও অসিত বরণ বিশ্বাস।

এদিকে সাধারণ সম্পাদকের শীর্ষ পদটি দখলে নিতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। প্রার্থীরা শেখ পরিবারের আর্শীবাদ পেতে মরণপন চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। চলছে নানা মেরুকরণ। এমনকি সংখ্যালঘু ইজমকে ব্যবহার করছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। যদিও হাইকমান্ড থেকে ‘না সংকেত’ পেয়েছেন কেউ কেউ। তথাপি হাল ছাড়ছেন তারাও।

এবার নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন হাইকমান্ড প্রার্থীদের আমলনামা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। খোদ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রার্থীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে প্রার্থীর পারিবারিক, সামাজিক ও সাংগঠনিক অবস্থান, তাদের আয়ের উৎস, তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে কতটুকু সম্পর্ক এবং দলের দুর্দিনে প্রার্থীর ভূমিকা সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে প্রার্থীদের আমলনা সম্পর্কে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার তথ্য সংগ্রহের সংবাদ টেনশন বেড়েছে জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়ে বিগত দিনের আমলনামা।

আজ মঙ্গলবার খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে একই মঞ্চে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খুলনা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক শীর্ষ নেতা উপস্থিত থাকবেন। প্রথম অধিবেশন একই মঞ্চে হলেও দ্বিতীয় অধিবেশন হবে পৃথক স্থানে। নগর কমিটির দ্বিতীয় অধিবেশন হবে ইউনাইটেড ক্লাবে এবং জেলার অফিসার্স ক্লাবে। দ্বিতীয় অধিবেশনে শুধুমাত্র কাউন্সিলর উপস্থিত থাকবেন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। সম্মেলনে বর্তমান সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। অপরদিকে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল। সম্মেলনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা রশিদী সুজা কিডনিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই মারা যান। এর পরপর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গাজী আব্দুল হাদিও মারা যান। তারপর থেকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন এ্যাড. সুজিত অধিকারী।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here