ঢাকাঃ

সদ্য সমাপ্ত কাউন্সিলে এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেকে ছাত্রদলের সভাপতি বানাতে বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করেছিলেন বলে জানা গেছে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তারা সফল হতে পারেননি। কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ফজলুর রহমান খোকন। আর বিএনপির ওই কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ সভাপতি পদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সিনিয়র সহসভাপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ আওয়ামী পরিবারের সন্তান। তার বাবা কাজী রফিক যশোর কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা এবং কেশবপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। শ্রাবণের বড় ভাই কাজী মোস্তাফিজুর রহমান সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, যিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে জিতেছিলেন। শ্রাবণের ছোট ভাই কাজী মানিক কেশবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ছাত্রদলকে নিজেদের কব্জায় রাখতে আওয়ামী পরিবার থেকে আসা কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী এবং যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু।

জানা গেছে, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে জেতাতে টুকু-এ্যানীর প্রচেষ্টাকে দূর থেকে সমর্থন দিয়ে গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন এবং বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলন।বিজ্ঞাপন

ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কয়েকজন প্রার্থী এবং সারাদেশ থেকে আসা কয়েকজন কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রাবণকে জিতিয়ে আনতে নিজেদের পকেট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করেছেনে এ্যানী-টুকু এবং সেটার পরিমাণ প্রায় দুই কোটি টাকা! শ্রাবণ নিজেও প্রচুর টাকা ঢেলেছিলেন এই কাউন্সিলে!

জানা গেছে, এ টাকার বেশিরভাগই খরচ হয়েছে সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৫৬৬ জন কাউন্সিলরের পেছনে। বিশেষ করে জেলা পর্যায়ের সুপার ফাইভ (সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক) নেতাদের পেছনে টাকা ঢালতে হয়েছে। কোনো ডিভিশন বা জেলার সুপার ফাইভ নেতাদের হাতে ৫০/১০০টা ভোট থাকলেই তাদের লাখ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। কাউন্সিলরদের ঢাকায় এনে অভিজাত হোটেলে রাখা, দামি খাবার খাওয়ানো, ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করা, ক্ষেত্র বিশেষ দামি ব্র্যান্ডের জামা-জুতা-টি-শার্টও গিফ্ট দিতে হয়েছে।

এছাড়া অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থীদের সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করতে এবং তাদের অনুসারীদের ভোট কিনতে শ্রাবণের জন্য টাকা ব্যয় করেছেন এ্যানী-টুকু। সে কারণেই নবনির্বাচিত সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন (১৮৬ ভোট) এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ (১৭৮ ভোট)-এর ভোটের সঙ্গে সভাপতি পদে বাকি সাত প্রার্থীর ভোটে আকাশ-পাতাল তফাৎ। এই দু’জন ছাড়া বাকিদের ঝুলিতে ভোট ৬/৭টি করে। অনেকেরই ধারণা, শেষ মুহূর্তে এসে প্রার্থীরাও তাদের ভোট বিক্রি করে দিয়েছেন।

এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক নেতাদেরও টাকা দিতে হয়েছে। শুধু অনুসারীদের ভোট নয়, অদূর ভবিষ্যতে স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন ছাত্রদলের সাবেকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের কাউন্সিলে এক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বলেন, ‘কোটি টাকা কিছুই না। আমি তেমন কিছু খরচ করিনি, তারপরও ১৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। একজন সভাপতি প্রার্থীকে জেতাতে বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা কোটি টাকা খরচ করেছেন বলে আমরাও শুনেছি।’

জানা গেছে, শনিবার রাতে গুলশানে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও ছাত্রদলের কাউন্সিলে দলের কেন্দ্রীয় দুই নেতার টাকা খরচের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। একটি স্বচ্ছ কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেও কাউন্সিলের আগের ‘মেকানিজম’ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। বিশেষ করে যাদের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের কয়েকজনের কর্মকাণ্ডে হতাশ স্থায়ী কমিটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে সবাই সন্তুষ্ট। কিন্তু রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি বানাতে নাকি দুই কোটি টাকা খরচ করেছেন বিএনপির কয়েকজন নেতা। এই বিষয়টি আমাদের কারও ভালো লাগেনি।’

এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু— কাউকেই ফোনে পাওয়া যায়নি। তাদের সবার নম্বর-ই বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে কাউন্সিল পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘একটি ঐতিহাসিক কাউন্সিলের পর এ ধরনের বিষয় সামনে আনা হচ্ছে কাউন্সিলকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য। কোনো প্রার্থীকে জেতাতে বিএনপির কোনো নেতা টাকা খরচ করেছেন— এমন খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা। পরাজিত কোনো প্রার্থী এমন কথা যদি বলে থাকে, সেটি হতাশা থেকে বলছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here