ফরিদপুরঃ

আদর্শ সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনাজ পারভীন লিপিকে টাকার জন্যই খুন করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ইয়ামিন নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার ইয়ামিনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এসব কথা জানিয়েছেন ফরিদপুরের মধুখালী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইফুল ইসলাম।

গত বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বাগাট বাজারে অবস্থিত আদর্শ সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনাজ পারভীন লিপি এনজিও কার্যালয়ে কাজ শেষে ভ্যানযোগে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন।

পরদিন শুক্রবার (০৩ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার বাগাট ঠাকুরপাড়ার একটি আখক্ষেত থেকে তার ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। শাহনাজ পারভীন লিপি বাগাট মুন্সিপাড়ার মির্জা শহিদুল ইসলামের স্ত্রী।

এ ঘটনায় শাহনাজ পারভীন লিপির ভাই মো. অহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মধুখালী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পর ঘাতকদের গ্রেফতারে মাঠে নামে পুলিশ। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতে শুরু করে মধুখালী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল।

মধুখালী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শাহনাজ পারভীন লিপি তার এনজিও কার্যালয়ে কাজ শেষে প্রতি রাতেই সৌখিন নামে এক ভ্যানচালকের ভ্যানে বাড়ি যান। প্রতিদিনই মোটা অংকের অর্থ তার সঙ্গে থাকত। ওই টাকার প্রতি নজর পড়ে সৌখিনের। এরপর সৌখিন ও তার বন্ধুরা লিপিকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে লিপি অফিস থেকে সৌখিনের ভ্যানে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সৌখিনের বন্ধু হাসান ও ইয়ামিন পথরোধ করে ভ্যানে ওঠে। কিছু সময় পর শীত লাগছে বলে সৌখিন তার বন্ধু ইয়ামিনকে ভ্যান চালাতে বলে এবং সৌখিন ও হাসান ভ্যানের পেছনে গিয়ে বসে।

কিছুদূর যাওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে ভ্যানের নিচে বিশেষ ব্যবস্থায় লুকিয়ে রাখা একটি কাঠের লাঠি বের করে সৌখিন। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে লিপির মাথায় আঘাত করে। মাথায় আঘাত করলে লিপি ভ্যান থেকে নিচে পড়ে যান। পরে হাসান লিপির শরীরে উপর্যুপরি আঘাত করে। লিপির দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়লে সৌখিন, হাসান ও ইয়ামিন একটি আখক্ষেতে নিয়ে যায়। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে লিপির জামা-কাপড় দিয়ে নাক ও মুখ চেপে ধরে তারা।

সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, লিপির মৃত্যুর পর তার হাতের আঙুলে থাকা কয়েকটি আংটি খুলে নেয় তারা। দুটি মোবাইল ও ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা নগদ টাকা নিয়ে মরদেহটি ফেলে রেখে পালিয়ে যায় সৌখিন, হাসান ও ইয়ামিন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার বৈকণ্ঠপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক ওয়াজ মাহফিল থেকে ইয়ামিনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ইয়ামিনের কাছ থেকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, পরে ইয়ামিনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাগাট দক্ষিণপাড়ায় হাসানের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে হাসানকে পাওয়া যায়নি। তার বাড়ি তল্লাশি করে নগদ ১২ হাজার টাকা ও লিপির আংটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় হাসানের একটি প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। প্যান্টটিতে রক্তের দাগ রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সময় এই প্যান্ট পরা ছিল হাসান।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ইয়ামিনকে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হয়েছে। হাসানের বাবা-মা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে হাসান জড়িত বলে বিষয়টি স্বীকার করেছেন। হাসান ও সৌখিনকে গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে। হাসান ও ইয়ামিনের বাড়ি বাগাট দক্ষিণপাড়ায় এবং সৌখিনের বাড়ি বাগাট মুন্সিপাড়ায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here