সবুজদেশ রিপোর্টঃ

হোমিও চিকিৎসক থেকে এলাকার শীর্ষ ধ্বনী। এই সীমাহীন উত্থানে তিনি সিঁড়ি বানিয়েছিলেন আওয়ামীলীগকে। জেলার বাঘা বাঘা আওয়ামীলীগ নেতাকে বশিকরণ করে রাজাকার থেকে আওয়ামীলীগার বনে যান। তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বাপের পদ পদবীকে কাজে লাগিয়ে তার দুই ছেলে ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, বিচার শালিসের নামে দুই পক্ষের কাছ থেকে টাকা আদায়, নছিম করিম, ভটভটি ও ইজিবাইক থেকে চাঁদা, মাদক এবং অস্ত্র ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজাকার পরিবার দুই সন্তান এখন যুবলীগের গর্বিত নেতা। এগুলো সবই যুদ্ধাপরাধী মামলায় গ্রেফতার হলিধানী ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি ও স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মিয়ার কথা।

১০ বছর আগেও যার কিছুই ছিল না, আজ তিনি এলাকায় মহাপ্রতাপশালী এক মানুষ। যার দুই ছেলের নাম শুনলে এখনো মানুষের বুক কেঁপে ওঠে। যেন এক নক্ষত্রের পতন। মঙ্গলবার যুদ্ধাপরাধী মামলায় আব্দুর রশিদ ও তার সহযোগী সাবেহ আলী মালিথাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর নির্যাতনের স্টিম রুলার চালানো হলিধানী ইউনিয়নের পটপরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। ফেসবুকে রাজাকারের সন্তানরা সমস্বরে আস্ফালন দেখাচ্ছে। রশিদ আওয়ামীলীগ করে। বিএনপি জামায়তকে বিতাড়ন করেছে। তার কিছুই হবে না। এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে ফেসবুকে।

কিন্তু এলাকাবাসীর ভাষ্য, এই রশিদ রাজাকারই বছরের পর বছর আরেক রাজাকার মসলেম উদ্দীনকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। মসলিম মাওলানা হলিধানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকা কালে বহু মামলার আসামী হন। তার চেয়ারম্যান পদ অটুট রাখেন আব্দুর রশিদ। খাতাপত্রে সাক্ষর থেকে শুরু করে দাপ্তরীক কাজ সমাধান করে দিতেন রাজাকার রশিদ। মঙ্গলবার এলাকা ঘুরে লোমহর্ষক সব ঘটনা পাওয়া গেছে। আর এ সব অপকর্মের অনুঘটক হচ্ছে রাজাকারের দুই গুনধর ছেলে হারুন ও বজলু। হলিধানী এলাকায় এমন কোন কাজ নেই যা তারা করেননি।

সরেজমিনে হলিধানী বাজারে কথা হয় ইজিবাইক, নছিমন, করিমন ও ভটভটি চালকদের সাথে। তাদের অভিযোগ কাতলামারী পুলিশ ফাঁড়ির নাম করে প্রতিদিন তাদের কাছ থেকে চাঁদা উঠাতো আছমত রাজাকারের ছেলে লিটন, সাহেব আলী রাজাকারের ছেলে রেজাউল, আনসারের ছেলে এরশাদ আলী। নিয়মিত চাঁদা প্রদান করার পরও মাসে দুই’শ টাকা করে জোরপুর্বক নিচ্ছে তারা। হলিধানী বাজারের ব্যবসায়ী ও বিদেশে থাকা পরিবারের কাছ থেকে তারা নিয়মিত চাঁদা নিতো। চাঁদা না দিলে ডাকাতি করতো। এমন একটি পরিবার হচ্ছে জাহানারা বেগমের। তার স্বামী সন্তান সবাই বিদেশ। রাজাকার রশিদের দুই ছেলে হারুন ও বজলুর নেতৃত্বে ওই বাড়িতে ডাকাতি হয়। কুপিয়ে জখম করে বাড়ির মহিলাদের। লুট করা হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। এই ডাকাতি মামলার আসামীরা হলেন, বকশিপুর গ্রামের আলী আহম্মেদের ছেলে নাছির উদ্দীন, বাজার গোপালপুর গ্রামের ইছাহাক জোয়ারদারের ছেলে মহিদুল হক, পশ্চিম দুর্গাপুর গ্রামের মাহাতাব সরদারের ছেলে মতিয়ার রহমান, কোলা গ্রমের আমির হোসেন মোল্লার ছেলে আজিজুল হাকিম, একই গ্রামের জলিল মন্ডলের ছেলে আয়নাল ওরফে কোরবান ও হামদহ খোন্দকার পাড়ার চেয়ার আলী মন্ডলের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু। ডাকাতি ছাড়াও মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের সাথে তারা জড়িত। এলাকা থেকে অর্ধশত মটরসাইকেল চুরির হোতা হচ্ছে বজলু ও হারুন। একটি রাজাকার পরিবার সন্তান হয়ে এ ধরণের আষ্ফালন এলাকাবাসীর মনে চরম আতংকের সৃষ্টি করে। তাদের ভয়ে এখনো মানুষ আতংকে বসবাস করছে। মানুষ মুখ খুরতে সাহস পায় না। ত্যাগী ও পোড় খাওয়া আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীরা রশিদ রাজাকার ও তাই দুই ছেলের ভয়ে চুপসে আছেন। পুলিশ ও প্রশাসন তার দুই গুনধর ছেলেকে আটকাতে পারেনি। আওয়ামীলীগ নেতাদের সেল্টারে দিনকে দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। এক সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে ভোট করে আব্দুর রশিদ বহিস্কার হন। তারপর বেশিদিন তাকে আটকিয়ে রাখতে পারেনি আওয়ামীলীগ। ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রয়ারী তার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে চিঠি দেন দলের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু।

এদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর থেকে পাওয়া প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে প্রণীত রাজাকারের তালিকায় দেখা গেছে হলিধানী ইউনিয়নে মোট ৪৬ জন রাজাকারের নাম স্থান পেয়েছে। এই তালিকার ১ নাম্বারে আছেন আব্দুর রশিদ। হলিধানী এলাকার অন্যান্য রাজাকাররা হলেন, কোলা গ্রামের আব্দুল মান্নান, আতিয়ার, মতিয়ার, আসমত, রওশন, সাত্তার, রাহেন, জহুরুল, সিরাজুল, মোকাররম, খোন্দকার মান্নান, খোন্দকার দুদশ, সিরাজুল, জব্বার, সাত্তার, বাদশা, লুৎফর, সাত্তার, মাহবুব, আকবার, শিফি, গোলজার, মহত আলী, সাহেব আলী, রফি উদ্দীন, আব্দুল হাকিম, রমিজ, মোজাম্মেল, কাফি, বাকী, আবুল হোসেন, রাজ্জাক, আলাউদ্দীন, শাহজাহান, শাহাবুদ্দীন, গরিবুল্লাহ, দাউদ, রহিম, মোবারক, ইদ্রিস, মসলেম, আনসার, আব্দুল হক, খালেক ও ইদ্রিস। রাজাকারের এই তালিকায় সাক্ষর করেছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, সমাজসেবা কর্মকর্তা মোমিনুর রহমান ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিদ্দিক আহম্মেদ। এই তালিকা সরকারের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কামালুজ্জামান বলেন, যে সব এলাকায় মানবতা অপরাধ সংঘতিট হয়েছিল, বিশেষ করে বিষয়খালী, গড়িয়ালা, শৈলকুপার কামান্না, হলিধানীর কোলা সে সব এলাকার রাজাকারদের বিচার হওয়া উচিৎ। তারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের হত্যা করে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তাদের ক্ষমা করা হবে স্বাধীনতার সাথে বেইমানী করা।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here