পাবনা প্রতিনিধিঃ

পাবনায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে পাবনার সুজানগরের এক মালয়েশিয়া প্রবাসীকে ঢাকার আইইডিসিআর’এ পাঠান হয়েছে। সেই সঙ্গে তার পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা মোট সংখ্যা ৩৮।

আইইডিসিআর’এ পাঠানো যুবক সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দী ইউনিয়নের হুগলাডাঙ্গী গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে মিরাজ হোসেন (৩২)। বুধবার (১৮ মার্চ) বিকেলে সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

হাবিবুর রহমান জানান, মিরাজ গত ১১দিন আগে মালয়েশিয়া থেকে বাড়িতে আসেন। গত তিনদিন আগে সে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হন এবং ওই অবস্থায় আটরশি ওরশ শরীফে বেড়াতে যান। মঙ্গলবার এলাকাবাসীর মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ খবর পেয়ে একটি মেডিক্যাল টিম নিয়ে তার বাড়িতে যান এবং এ বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে আলাপ করেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরা স্বীকার করেন, সে গত তিনদিন ধরে হালকা হালকা জ্বর-সর্দিতে ভুগছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তার সাথে মোবাইলে কথা বলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে পরীক্ষার জন্য ঢাকার আইইডিসিআর’এ পাঠান। সেই সঙ্গে তার পরিবারের অন্য ১৪ জন সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখেছেন।

এদিকে, করোনা ভাইরাস ঝুঁকি এড়াতে জেলার ৩৮ জন বিদেশ ফেরত ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইনের শর্ত মেনে টানা ১৪ দিন নিজ বাড়িতে ঘরের বাইরে না যেতে তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব শর্ত মানতে তাদের বাধ্য করতে বুধবার কঠোর নজরদারি শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। শর্ত ভঙ্গ করে বাইরে ঘোরাঘুরি করায় সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নে মালয়েশিয়া ফেরত এক প্রবাসী যুবককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।

পাবনার সিভিল সার্জন ডাঃ মেহেদী ইকবাল জানান, ১৬ মার্চ জেলার বিদেশ ফেরত ১৩ জনকে তারা হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেছিলেন। কিন্তু গত দু দিনের ব্যবধানে তা বেড়ে দাড়িয়েছিল ৪০। তবে তাদের মধ্যে দুজনকে এরই মধ্যে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে, এখন কোয়ারেন্টিনে থাকার সংখ্যা ৩৮। তিনি বলেন এখনো পাবনায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি। তিনি বলেন, করোনা ঝুঁকি এড়াতে পাবনায় স্বাস্থ্য বিভাগ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করেছে। করোনা আক্রান্ত দেশ কিংবা বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত ৩৮ জনকে প্রবাসী ও বিদেশ ফেরত মানুষকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, পাবনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে খোলা হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড ও করোনা সতর্ককরন ডিজিটাল ডিসপ্লে। পাবনা সিভিল সার্জন অফিসে করোনা বিষয়ক হটলাইন খোলা হয়েছে ।

এদিকে, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা অনেক বিদেশ ফেরত ব্যক্তিই শর্ত ভেঙে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফলে, কোয়ারেন্টাইনের শর্ত মানতে বাধ্য করতে বিদেশ ফেরতদের বাড়ি বাড়ি নজরদারি শুরু করেছে জেলা প্রশাসনের দল।

পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, সদর উপজেলায় অন্তত ২০ জন বিদেশ ফেরত ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তদারকি করতে বুধবার বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের দুটি পৃথক দল কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেয়। এ সময় দাপুনিয়া ইউনিয়নে বাঙগাড়ি গ্রামে ফিরোজ আহমেদ নামের মালয়েশিয়া ফেরত এক যুবক শর্ত ভঙ্গ করে বাজারে ঘোরাঘুরি করতে দেখায় ভ্রাম্যমান আদালতে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরো জানান, করোনা ঝুঁকি মোকাবেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনের শর্ত মানতে বাধ্য করতে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ ব্যপারে স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here