ফাইল ফটো

পাবনাঃ

অসুস্থ ছোট ভাই রবিউল ইসলাম (২৪) বুঝতে পারছিলেন না বড় ভাই রমজান কেন তাকে এতো আদর করে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন। মিষ্টি খাওয়া শেষ হওয়ার পরই এক সহযোগীকে নিয়ে রমজান ছোট ভাই রবিউল ইসলামকে হত্যা করে বিছানায় শুইয়ে রাখেন। সন্ধ্যায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে রাতে তিনিই ভাই হত্যার নাটক সাজান। ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ানো প্রতিবেশীকে ফাঁসিয়ে টাকা আদায় করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের তেঁথুলিয়া কারিগরপাড়ায় শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে (২৮ সেপ্টেম্বর) হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেফতার ও গ্রামের একটি পুকুর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহত রবিউল ইসলাম তেঁথুলিয়া কারিগরপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল গফুর মোল্লার ছেলে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রবিউলের আপন ভাই রমজান মোল্লা (৩০) ও তার সহযোগী রুবেলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রুবেল সাঁথিয়া উপজেলার সরব গ্রামের মনছুর আলীর ছেলে।

পুলিশ জানায়, ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সাঁথিয়া থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, রবিউল খুন হওয়ার সপ্তাহ দুয়েক আগে প্রতিবেশী একজনের বাড়ি চুরি হয়। সে সময় তারা মাদকাসক্ত রবিউলকে দোষারোপ করেন। তারা রবিউলকে মারধর করে একটি দাঁতও ভেঙে দেন। ওই সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও রবিউল বলেছিলেন- পড়ে গিয়ে তার তাঁত ভেঙেছে।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার ভাই রমজান জানিয়েছেন- প্রতিবেশীর সঙ্গে রবিউলের ঝামেলাকে তিনি সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেন। তার ভাই রবিউল নেশাগ্রস্ত বলে তার স্ত্রীও বাবার বাড়ি থাকেন। তিনি পরিকল্পনা করেন- একা ঘরে থাকা অসুস্থ রবিউলকে মারা খুব সহজ হবে। আর হত্যার পর প্রতিবেশীর নামে মামলা দেয়া হবে। তারা মীমাংসার প্রস্তাব দিলে বড় অংকের টাকা আদায় করা সহজ হবে।

পরিকল্পনা মোতাবেক তিনি রুবেল নামে একজনকে ভাড়া করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে রবিউলের ঘরে ঢুকে দেখেন অসুস্থ রবিউল কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছেন। তারা তাকে ডেকে তুলে গল্পগুজব করে ‘পথ্য’ হিসেবে দেয়া মিষ্টিও খাওয়ান। এরপর তারা টিপ চাকু দিয়ে রবিউলকে জবাই করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে তারা রবিউলের পায়ের রগও কেটে দেন। এরপর তাকে বিছানায় কাঁথা গায়ে দিয়ে আবার শুইয়ে রাখেন। পরে রাতে রমজান ও রমজানের স্ত্রী রবিউলকে হত্যা করা হয়েছে বলে চিৎকার করে সবাইকে জানান।

এ ঘটনায় পরদিন রবিউলের আরেক ভাই বাচ্চু মোল্লা সাঁথিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন।

সাঁথিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামার জানান, রমজান আলীর মিষ্টির সঙ্গে ঘুমের বা অন্য কোনো ওষুধ মেশানোর কথা স্বীকার করেননি। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে এটা স্পষ্ট হবে। গ্রেফতার দুইজনকে মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) আদালতের মাধ্যমে পাবনা করাগারে পাঠানো হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here