জামির হোসেনঃ

মা অন্যের বাড়ীতে কাজ করেন। বাবা কখনও ভ্যান চালক, আবার কখনও বাজারের ডে লেবার। তাদের অভাবের সংসারে প্রতিবন্ধি ছেলে ইমন হোসেনের ডান হাতটি একেবারেই অকেজো। তারপরও লেখাপড়া শেখার প্রচন্ড আগ্রহে বামহাত দিয়েই লেখাপড়া চালাচ্ছিল।

গত ২০১৪ সালে সে এসএসসি পাশের পর টাকার অভাবে পর পর ২ বছর এইচ এস সি পরীক্ষার ফরম পুরন করতে পারেনি। এবার অনেক কষ্টে ধার দেনা করেই এইচএসসি ২০১৯ পরিক্ষা দিয়ে জিপিএ- ৪.০২ পেয়ে পাশ করেছে। কিন্তু ছেলে পাশ করলেও তার উপরে ক্লাসে ভভি, বই খাতা কেনা সহ পড়াশোনার খরচ জোগাড়ে বাবা মা পড়েছেন এখন মহা দুঃচিন্তায়। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে ভাড়া বাড়িতে বসবাসকারী প্রতিবন্ধি ইমনের বাবা মায়ের ইচ্ছা ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। কিন্তু হতদরিদ্র পরিবারটির অভাবের সংসারে সামর্থ্য না থাকায় এখন বিত্তবানদের দ্বারস্থ হচ্ছেন পিতা মাতা।

প্রতিবন্ধি ছাত্র ইমনের মা আলেয়া খাতুন জানান, তার দুই সন্তানের মধ্যে ইমন ছোট। শিশু বয়সে খেলতে গিয়ে একটি দেওয়ালের উপর থেকে পড়ে তার ডান হাতটি ভেঙ্গে গিয়েছিল। সে সময়ে চিকিৎসা করালেও তার হাতটি পচন ধরে শুকিয়ে সম্পুর্ণ অকেজো হয়ে যায়। সেই থেকেই ইমন বাম হাত দিয়ে লেখাপড়া শিখছে। তার মা আরো জানান, অভাবের সংসারে ছেলের লেখাপড়ার টাকা যোগাড়েও তিনি অন্যের বাড়িতেও কাজ করেন।

হতদরিদ্র ইমনের বাবা মতিয়ার রহমান জানান, তিনি বাজারে ভ্যান চালিয়ে, আবার কখনও ডে লেবারের কাজ করেন। তার নিজের বলতে কোন জমিজমা নাই। দু’সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে সেলিম কয়েক বছর আগে সংসার থেকে আলাদা রয়েছে। আর ছোট ছেলে প্রতিবন্ধি ইমনকে নিয়ে শহরের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তিনি আরো জানান, সংসারে প্রচন্ড অভাব থাকলেও ছেলের লেখাপড়ার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ দেখেই তাকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। এবার এইচ এসসি ২০১৯ পরিক্ষায় পাশ করলেও তার উচ্চত্তর ক্লাসে ভর্ত্তি, বই খাতা কেনা সহ লেখাপড়ার খরচ যোগাবেন কিভাবে তা নিয়েই চিন্তিত।

ইমনের গ্রামবাসীদের মধ্যে মধুগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ভ’সিমাল ব্যাবসায়ী আলহাজ¦ তোফাজ্জেল হোসেন জানান, প্রতিবন্ধি হলেও ছেলেটি মেধাবী। তার পিতা মাতার শেষ বয়সে একমাত্র ভরসাই হল ইমন। তাই সমাজের দানশীল ব্যাক্তিরা ইমনের পাশে দাড়ালে সে আরো উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে পারলে এ সমাজের বোঝা না হয়ে বাবা মায়ের পাশে দাড়াতে পারবে।

শহীদ নুর আলী কলেজের মেধাবী ছাত্র প্রতিবন্ধি ইমন জানায়, মায়ের মুখে শুনেছেন ছোট বেলাতে তার ডান হাতটি ভেঙ্গে অকেজে হয়ে যায়। তারপরও বাবা মায়ের অনুপ্রেরনায় মনের জোরেই সে বাম হাত দিয়েই লেখাপড়া শুরু করে। সে জানায়, ২০১৪ সালে নরডাঙ্গা ভুষন বিদ্যালয় থেকে জিপিএ- ৩.৪২ পেয়ে এসএসসি পাশ করেছিল। এরপর এইচএসসিতে ভর্তি হলেও টাকার অভাবে পর পর ২ বছর এইচ এস সি পরিক্ষার ফরম পূরন করতে না পারায় পরিক্ষা দেওয়া হয়নি তার। সর্বশেষ তার পিতা মাতা অনেক কষ্টে ধার দেনা করেই এইচএসসি ২০১৯ ফরম পূরন করে দেওয়ায় সে পরিক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করে। কিন্তু পাশ করলেও এখন সে মহা দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। তার দিনমজুর হতদরিদ্র পিতা মাতা কিভাবে লেখাপড়ার খরচ চালাবেন।

এ জন্য সে সমাজের হৃদয়বান মানুষের সহানুভ’তি কামনা করেছে। মেধাবী ছাত্র ইমনের সাথে কথাবলা সহ সহযোগিতার হাত বাড়াতে ০১৭৮৬- ৩৪২৩০৯ নং মোবাইলে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছেন পরিবারটি।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here