পাবনা প্রতিনিধিঃ

‘অজ্ঞাত ভাইরাসে নয়, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় পাবনায় দুই বোনের মৃত্যু’ হয়েছে। ঘটনাস্থল পরির্দশন শেষে আইইডিসিআর এর অনুসন্ধান দল সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন।

পাবনার ফরিদপুরে আকস্মিক অসুস্থতায় সাথী খাতুন (১৪) ও বিথী খাতুন (১০) নামে দুইবোনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মাঠে নামে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) অনুসন্ধান দল। রোববার আইইডিসিআর’র মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত এক পত্রে পাবনার ফরিদপুরে দুইবোনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ দলকে নির্দেশ দেন। ওই পত্রে মাঠ পর্যায়ের তদন্ত শেষে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেয়া হয়।

তার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গতকাল সোমবার দুপুরে ফরিদপুর উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে মৃত সাথী ও বিথীর বাড়িতে যান। এ সময় পাবনার সিভিল সার্জন ডাঃ মেহেদী ইকবাল ও ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. লুলু ওয়াল মারজান উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত দলের সদস্যরা মৃত দুইবোনের বাবা-মাসহ স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন। এর আগে তারা পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও সিভিল সার্জনের সাথে সাক্ষাত করে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন খাদ্য বিষক্রিয়ায় ঐ দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যরা গণ-মনোবিজ্ঞানজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন।

এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল তিনটায় পাবনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের পাবনার সিভিল সার্জন ডাঃ মেহেদী ইকবাল জানান, যেহেতু একই পরিবারের ছোট দুই বোন পর পর দুইদিনের ব্যবধানে মারা গেছে, সেকারণে তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। বিষয়টি ঢাকাস্থ জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে জানানো হয়েছিল। সেখান থেকে গঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান টিম পাবনায় এসে তদন্ত করে দেখছেন। ঠিক কি কারণে দুইবোনের মৃত্যু হয়েছে সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তারা। এ ছাড়াও বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় ফিরবেন বিশেষজ্ঞ দল। তাদের পরীক্ষা নীরিক্ষার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

সিভিল সার্জন আরো জানান, তবে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মৃত্যুর কারণে আতংকেব মাস হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গ্রামের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসীকে আতংকিত না হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বমি করতে শুরু করে দুই বোন সাথী ও বিথী। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত ভোররাতে বড় বোন সাথী ও পরদিন শুক্রবার রাতে হাসপাতালে ছোট বোন বিথীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে আতংকে এলাকার অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।

মৃত সাথী ও বিথি ফরিদপুর উপজেলার হাদল ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের শহীদুল ইসলাম প্রামানিকের মেয়ে। এদের মধ্যে সাথী খাতুন অষ্টম শ্রেণীর ও বিথি চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।

এ ঘটনার পর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. লুলু ওয়াল মারজানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি মেডিকেল টিম রোববার সকালে ওই গ্রামে পরিদর্শনে যান। তারা স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন এবং কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here