কুষ্টিয়াঃ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সোনালী ব্যাংক শাখায় ভূয়া পে-অর্ডার দেখিয়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে সোনালী ব্যাংকের দালাল চক্রের প্রধান সোহেল রানা ও সহযোগী মনিরুজ্জামান মনিরের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য ওই চক্রটি ব্যাংকের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন মাসিক অথবা কোনক্ষেত্রে দৈনন্দিন লোভনীয় মুনাফার ফাঁদে ফেলে ওই চক্রের প্রধান সোহেল রানার নেতৃত্বে চক্রটি মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের হাতে ভূয়া পে-অর্ডার ধরিয়ে দিয়ে নিজে লাপাত্তা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হলে তারা তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।

একলক্ষ টাকায় ১৮শ’ টাকা বিশেষ ক্ষেত্রে ২হাজার টাকা মুনাফা মাসিক অথবা দৈনন্দিন এমন লোভনীয় প্রস্তাবে জায়গা জমি বিক্রি করে অথবা জমানো গচ্ছিত অর্থ দৌলতপুর উপজেলার মহিদুল ইসলাম ওরফে মইদুল ২৩লক্ষ টাকা তুলে দেন সোনালী ব্যাংকের দালাল প্রতারক সোহেল রানার হাতে। এমন লোভনীয় প্রস্তাবে একই এলাকার আবুল হোসেন নেন্টু ১৮লক্ষ টাকা, ইয়াকুব আলীর নাতী ছেলে শান্ত সাড়ে ৬লক্ষ টাকা, তাইজুল ইসলাম ২লক্ষ টাকা, মোকাদ্দেস আলী ১০লক্ষ টাকা, রিয়াজুল ইসলাম ৯লক্ষ টাকাসহ অন্তত ২০জনের কাছ থেকে সোহেল রানা হাতিয়ে নেয় ৯৬লক্ষ টাকা। কয়েক মাস এমন লোভনীয় লাভের টাকাও পান ওইসব ভুক্তভোগীরা।

প্রতারক সোহেল রানা কাউকে না জানিয়ে তার সহযোগী মনিরুজ্জামান ওরফে মনিরের কাছে বাবা জামিরুল ইসলামের রেখে যাওয়া ভাগে পাওয়া ৩কাঠা জমি রেজিষ্ট্রি করতে গিয়ে ভুক্তভোগীদের মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তখন তারা সোহেল রানা ও তার প্রধান সহযোগী মনিরুজ্জামান মনিরের কাছ থেকে লভ্যাংশ নেয়ার জমা রাখা টাকা চাইতে গেলে তারা শুরু করেন গড়িমসী ও বিভিন্ন অযুহাতে তালবাহানা। একপর্যায়ে টাকা না দিয়ে সোনালী ব্যাংক দৌলতপুর শাখার পে-অর্ডার তুলে দেন ভুক্তভোগীদের হাতে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখন, ওই পে-অর্ডার ব্যাংকে ভাঙাতে গিয়ে। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সাফ জানিয়ে দেন ওই পে-অর্ডারের বিপরীতে টাকা নেই। ব্যাংক কর্র্র্তৃপক্ষের এমন কথায় যেন মাথায় বাজ পড়ে তাদের। ভূক্তভোগীরা যোগাযোগ করেন প্রতারক সোহেল রানার সাথে। কিন্ত তারা তাদের অবস্থান থেকে তখনও অনড়। ভুক্তভোগীরা পরবর্তীতে নিশ্চিত হন ওরা প্রতারনার শিকার হয়েছেন।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে ওই প্রতারক চক্র ভুক্তভোগীদের হাতে যে পে-অর্ডার তুলে দেন তা সোনালী ব্যাংক দৌলতপুর শাখারই। তবে পে-অর্ডারে তিন জনের স্বাক্ষর থাকার কথা থাকলেও তাতে গড়মিল পাওয়া যায়। শারীরিক প্রতিবন্ধী জমির উদ্দিন নামে এক সিনিয়র কর্মকর্তার স্বাক্ষর রয়েছে ওই পে-অর্ডারগুলোতে। যদিও পদোন্নতি পেয়ে সোনালী ব্যাংক ভেড়ামারা শাখায় সদ্য বদলী হওয়ায় প্রতিবন্ধী জমির উদ্দিন দাবি করেন তাকে ফাঁসাতে এমন চক্রান্ত করা হয়েছে।

এদিকে প্রতারক চক্রের এমন জালিয়াতির প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে ভূক্তভোগীসহ এলাকাবাসী।

পে-অর্ডার প্রতারণার বিষয়ে সোনালী ব্যাংক দৌলতপুর শাখার ব্যবস্থাপক ওবাইদুর রহমান বলেন, যে পে-অর্ডারগুলো ভুক্তভোগীদের দেওয়া হয়েছে তা অসম্পূর্ন। সেখানে আরো দু’জন কর্মকর্তার সাক্ষর ও সীল থাকার কথা যা পে-অর্ডারগুলোতে নেই। প্রাপকের ঘরে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামও নেই। তাঁর দাবি প্রতারক চক্রটি যে পে-অর্ডারগুলো ব্যবহার করেছে তা ব্যাংক কর্তৃক সরবারহকৃত নয়।

দৌলতপুর সোনালী ব্যাংক শাখার পে-অর্ডার জালিয়াতি নিয়ে সোনালী ব্যাংক কুষ্টিয়া প্রধান শাখার পক্ষ থেকে দু’সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত কাজও শুরু করেছেন। ব্যাংকের কেউ জড়িত থাকলে তার ব্যবস্থাও নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া প্রিন্সিপাল অফিসের এজিএম এ এইচ এম শফিকুর রহমান। এদিকে পে-অর্ডার জালিয়াতির জানাজানি হওয়ার পর ওইদিন দিনভর স্থানীয় একটি দলীয় কার্যালয়ে প্রতারক সোহেল রানা ও মনিরুজ্জামান মনিরকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার মিটিং হলেও প্রতারণার শিকার ভূক্তভোগীরা কেউ টাকা ফেরত পায়নি। সন্ধ্যায় দুই প্রতারককে ওই কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেয়া হলে তৎক্ষনাৎ তারা রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে গা ঢাকা দেয়।

শুধু তাই নয়, প্রতারক সোহেল রানা এক বছর আগে প্রতরাণার করে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা আত্মসাৎ করলেও তখন তার বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এক লক্ষ টাকার বিপরীতে মাত্র ২৪ ঘন্টায় এক হাজার টাকা অতি লোভনীয় মুনাফা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে দৌলতপুরের তারাগুনিয়া বাজার এলাকার মোস্তফার কাছ থেকে ২২লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় সোহেল রানা। এরকম উপজেলা বাজারের নাসিম উদ্দিন, লালন, শহিদুল ইসলাম ও মিজানসহ বেশ কয়েক জনের কাছ থেকে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা নিয়ে সেসময় গোপনে মাদক ব্যবসাসহ অসৎ ব্যবসার সিন্ডিকেট গড়ে তুলে সোহেল রানা। বিষয়টি জানাজানি হলে এনিয়ে কয়েকদফা মিটি সিটিং হলেও অদ্যাবধি কেউ টাকা ফেরত পায়নি বলে সেসময়ের ভূক্তভোগীদের অভিযোগ।

ধূর্ত সোহেল রানা ও তার প্রধান সহযোগী মনিরুজ্জামান মনির শিক্ষার দিক দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পের না হলেও তাদের চাতুরতার মেধা রয়েছে শিক্ষিত চোরদের চেয়েও বেশী। পুলিশ প্রশাসনসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে তাদের বিচরণ ছিল অবাঁধ। হুমকি ধামকি দিয়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করে চাঁদাবাজির করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি ভূক্তভেগীদের।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here