জাহিদ হাসান, যশোরঃ

ভাঙ্গা-চোরা রাস্তায় জমে আছে নোংরা পানি, ডাবের খোসা। সেই পানির ওপর একঝাঁক মশা। রাস্তা দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে মশা উড়ে যাচ্ছে। খানিক পরে আবার পানিতে এসে বসছে।

বুধবার ( ৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টায় যশোর সরকারি সিটি কলেজের মূল ফটকের রাস্তায় এবং পাশের নালায় দেখা মেলে এই চিত্রের। দেশের বড় পেক্ষাগৃহ মনিহার সিনেমার পাশেই অবস্থিত সরকারি সিটি কলেজ। এই কলেজে একাদশ, অনার্স ও মাস্টার্স পকার্সে ২০টি বিভাগ রয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। অথচ কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে মনে হবে; নেই কোনো অভিভাবক, নেই কোনো কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি দেশের মানুষ যে মুহূর্তে এডিস মশার আতঙ্কে ডেঙ্গু জ্বর থেকে রক্ষা পেতে বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অঙিনা, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নির্মাণাধীন স্থাপনায় এডিস মশা রোধকল্পে প্রচার-প্রচারণা সতর্ক বার্তা দিলেও যশোর সরকারি সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষের এনিয়ে টনক নড়েনি। কলেজ এলাকায় গতমাসের ২৯ আগস্ট ১৩ হাজার ২৫৫টি এডিসের লার্ভা পাওয়ায় এলাকায় উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ রয়েছে।

সরেজমিনে (৪ সেপ্টম্বর ) কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কলেজ গেট থেকে কলেজ মাঠের উত্তর কর্নার পর্যন্ত রয়েছে সারি সারি জঙ্গল। কলেজের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বন জঙ্গল-জঞ্জালে ভরা। সেই সঙ্গে পানি ভর্তি পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, কাগজ ও ডাবের খোসা যা ডেঙ্গু রোগের এডিস মশার প্রিয় আবাসস্থল। কলেজের মধ্যে দুটি পুকুর দূষণে ও কচুরিপানায় ভরা। দীর্ঘদিনের পরিস্কারের কোন উদ্যেগ নেই কলেজ কর্তপক্ষের। জঙ্গলে বাসা পোকামাকড় ও মশার। শিক্ষার্থীদের মাঝে মশাবাহিত নানা রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। ক্যাম্প্যাসে মশার উপদ্রব যে পরিমাণ বেড়েছে তার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছে শিক্ষার্থীরা।

অনার্স ৪র্থ বর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী হাসানুজ্জামান, রিক্তা, সালামসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, বর্ষাকাল আসলেই কলেজের গেটে পানি জমে থাকে। ক্যাম্পাসের মাঠে ঘাসগুলো বড় এবং পানি ভর্তি অপরিস্কার থাকে। এতে মশার বংশবিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্লাস চলাকালীন সময়ে রুমে মশার উপদ্রব বেশি।

কলেজের এত নোংরা পরিবেশের জন্য অভিভাবকরাও রীতিমতো বিস্মিত। কলেজে আসা সালমা আক্তার নামে এক অবিভাবক বলেন, ডেঙ্গুর এই ভয়াবহতার সময়ের সিটি কলেজে নোংরা। কলেজের প্রধান প্রবেশদ্বার দিয়ে কাদা-নোংরা পানি মধ্যে দিয়ে কলেজে ঢুকতে হচ্ছে। নোংরা পরিবেশে ডেঙ্গু আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা দিন পার করছে বলে মনে করছে এই অবিভাবক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর জুবাইদা গুলশান আরা বলেন, কলেজের ডেঙ্গু নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কলেজের আশেপাশে পৌরসভার ড্রেনগুলো অপরিস্কার থাকার ফলে পানি নিংস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকালে বেশির ভাগ সময়ে পানি জমে থাকে। ফলে পরিবেশ রক্ষা করা যাচ্ছে না। দ্রুত কলেজের ক্যাম্পাস পরিস্কার করার কাজের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কে.এম রব্বানি জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বোর্ডের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধানদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ডেঙ্গু বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতনসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনা পরিস্কার ও নিয়মিত স্প্রে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিটি কলেজের এই নির্দেশ মানা উচিত।

যশোর পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন বলেন, পৌরসভার মধ্যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পৌরসভা স্প্রে করে দিয়েছে। আর কলেজ পরিস্কার না করাটা কলেজ কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here